আপনি কি কাউকে খুঁজছেন
-সুনির্মল বসু
স্মৃতি বিলাস নিয়ে বেঁচে আছি, জীবনের চড়াই-উৎরাই অনেক তো পেরুনো হলো, পিছনে ফেলে এলাম এক বিশাল সরণি, এই পথের শেষ কোথায়, তখন কি তা জানি,
জীবনের বিন্যাস পর্ব ছিল অন্যরকম, স্বপ্ন ছিল, কল্পনা ছিল,
পারিনি তো পৌঁছতে সেখানে, কী জ্বালাতন,
সেই জীবনে যত সন্তোষ ছিল, অসন্তোষ ছিল তারও চেয়ে বেশি, জীবনটাকে ঘেটে দেখলাম, একি,
এজন্য এক লম্বা স্মৃতি সফর, সঙ্গে সহযাত্রী অনেক ছিল, কত যে উন্মনা মুখ পাশে হেঁটে গেল,
ইদানিং জীবনে ব্যস্ততা কমেছে,
স্বপ্নের সকাল বিকেল পেরিয়ে জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে পড়েছি,
তবু স্মৃতিতে দেখি জাহাজের মাস্তুল, দূরের মেহগনি গাছ, পাইন বন, দেবদারু গাছের বর্ণময় মিছিল আজও আমায় পিছু ডাকে,
ডুয়ার্সের ঝুলন্ত ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে যখন অরণ্য দেখছি, তখন মনে হয়েছিল, কেউ যেন পেছন থেকে ডেকে প্রশ্ন করছে, আপনি কি কাউকে খুঁজছেন,
সম্প্রতি এটা ঘটছে,
জব্বলপুরে পাহাড়িয়া গিরিখাতের সামনে দাঁড়িয়ে
শীতল জলের ধারায় উপর নৌকোয় যখন বসে আছি, দূরের খাড়া পাহাড় আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, তখনো এই প্রশ্নটা একবার আমাকে তাড়া করেছিল, আপনি কি কাউকে খুঁজছেন,
দার্জিলিঙে মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাবের সামনে যখন ঢাল পথে হাঁটছি, তখনো পেছন থেকে কেউ যেন আমাকে অবিকল এই একি প্রশ্ন করেছিল,
আপনি কি কাউকে খুঁজছেন,
বারবার একই প্রশ্ন আজকাল আমার পিছু নেয়,
জানিনা, বুঝিনা, কেন একই প্রশ্ন বারবার আমাকে তাড়া করে,
গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে, আমি জানালার ওপারে নারকেল গাছের পেছনে ডুবে যাওয়া ভোররাতের চাঁদ দেখি, তখনো কেউ যেন প্রশ্ন করে,
আপনি কি কাউকে খুঁজছেন,
অনুভব করি, আসলে একটা বয়সে পৌঁছে গেলে,
এভাবেই আমরা স্মৃতি হাতড়ে ফিরি,
এভাবেই একটা বয়সে এলে, আমাদের যাপন প্রক্রিয়া স্মৃতি খুঁজে ফেরে,
অনেকটা পথ হেঁটে এসে পিছন ফিরে তাকাবার মতো স্মৃতিরা তখন তোতা পাখির মত বুকের মধ্যে কথা বলে যায়,
স্মৃতিদের এই বক বকম বক বকম, মন্দ লাগে না।